সব কূলহারা জাতীয় পার্টি

নিউজ ডেস্ক | রাজনীতিবার্তা.কম

আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২৪ , ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

বিগত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি (জাপা) শেষ পর্যন্ত ডাক পেল না প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব গত তিন সংসদের বিরোধী দলটিকে আওয়ামী লীগের দোসর মনে করায় ডাকা হয়নি।

জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সরকার হয়তো জাতীয় পার্টির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না। সে কারণে সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। সরকার না চাইলে পরামর্শ দেওয়া হবে না।

সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গতকাল শনিবার ১০টি দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু অতীতে রাষ্ট্রক্ষমতা ও বিরোধী দলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জাপা ডাক পায়নি। যদিও দলটির সূত্রের খবর, সংলাপে আমন্ত্রণের জন্য উদগ্রীব ছিলেন জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দলটির নেতাকর্মীরা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন করেছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাপা। তিন বছর পর জোট করে বিএনপির সঙ্গে বেরিয়ে যায় এক বছরের মধ্যেই। ২০০৬ সালে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের মহাজোটে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট ২৯ আসন ছাড়ে এরশাদের জাপাকে। ২০০৯ সালে গঠিত হাসিনা সরকারে মন্ত্রী ছিলেন জি এম কাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচন এরশাদ বর্জনের ঘোষণা দিলেও, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একাংশ অংশ নেয়। দলটি সেই বিতর্কিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩টিসহ মোট ৩৪ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়। আবার জাপার তিন এমপি হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন। এতে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পায় জাপা।

সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাপাকে ২৭ আসন ছাড়ে আওয়ামী লীগ। রাতের ভোটখ্যাত সেই নির্বাচনে ২২ আসন পেয়ে ফের প্রধান বিরোধী দল হয় জাপা। দলটির এমপিরা সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। জাপার এমপি রওশন আরা মান্নান তো শেখ হাসিনাকে ১০ বছর বিনা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে রাখার প্রস্তাবও করেছিলেন।

২০১৯ সালে জি এম কাদের জাপার নেতৃত্বে আসার পর দলটি লাগাতার সরকারের সমালোচনা করে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে ভারত থেকে ফেরার পর অনেকটা চুপ হয়ে যান। ডামি নির্বাচনখ্যাত ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬ আসনে ছাড় পায়। নির্বাচনের প্রচারে জাপার প্রার্থীরা পোস্টারে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। দ্বাদশ সংসদে ১১ আসন পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে বিরোধী দল হয় জি এম কাদেরের জাপা। তবে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই জি এম কাদের বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে পক্ষে সরব ছিলেন। এখন তিনি বক্তৃতায় অভ্যুত্থানে তাঁর ও দলের ভূমিকার ফিরিস্তি দিচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাপাকে জোর করে নেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি জাপা চেয়ারম্যানের।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সেনাসদর ও বঙ্গভবনে ডাক পেয়েছিল জাপা। কিন্তু অতীত ভূমিকার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ জাপাকে সংলাপে ডাকার প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণহত্যা ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে জাপা নেতাদের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা হয়েছে। এতে বরাবর সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সখ্য রেখে চলা জাপা বিপদে পড়েছে। কোনো দলই সমর্থন-সহানুভূতি দেখাচ্ছে না।

রাজনীতিবার্তা.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।